<< ৫ মাসে যুক্তরাজ্যে ৭৫ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে ওমিক্রনে

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে আগামী ৫ মাসে ইংল্যান্ডে ২৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এখনই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে দেশটিতে বিপুল সংখ্যক এই প্রাণহানি হতে পারে।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। বিপুল এই প্রাণহানি রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ আরোপের প্রয়োজন হতে পারে বলেও ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতোমধ্যেই বলেছেন, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও সংক্রামক হতে পারে ওমিক্রন। একইসঙ্গে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা, আগামী জানুয়ারিতেই দেশটিতে বড় আঘাত হানতে পারে ওমিক্রন। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই বড় আকারে সংক্রমণের ঢেউ দেখা যেতে পারে। আর এতেই প্রাণ হারাতে পারেন ২৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার মানুষ।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের (এলএসএইচটিএম) বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, চলতি মাসের শেষের দিক থেকেই করোনা আক্রান্তদের সংক্রমিত হওয়ার প্রধান ধরন হয়ে উঠতে পারে ওমিক্রন। আর এতে করে জানুয়ারিতে বড়সড় সংক্রমণের ঢেউ দেখা দিতে পারে যুক্তরাজ্যে।

বিজ্ঞানীদের মতে, সবচেয়ে আশাব্যাঞ্জক পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখলেও ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ চূড়ায় উঠলে দৈনিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই হিসেবে ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কম করে হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়াতে পারে পৌনে দুই লাখ এবং প্রাণহানি হতে পারে ২৪ হাজার ৭০০।

অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এই গবেষণা অনুসারে, আগামী এপ্রিলের শেষের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। দৈনিক হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের সর্বাধিক সংখ্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সুরক্ষা করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠিক কতটা এড়াতে পারছে এবং কার্যকরী বুস্টার ডোজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী করতে পারবে, তার ওপরই মূলত আক্রান্তের সংখ্যা নির্ভর করবে। ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এই দু’টি বিষয় এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

সাইন্টিফিক অ্যাডভাইসরি গ্রুপ ফর ইমারজেন্সিস (সেজ) এবং সাইন্টিফিক প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা গ্রুপ অন মডেলিং (এসপিআই-এম) এর অংশ হিসেবে এসব বিজ্ঞানীরা ব্রিটিশ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরীক্ষামূলক বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে তারা এটিই দেখাতে চেয়েছেন যে, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ‘প্লান বি’ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ব্রিটেনে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৩ জন এবং মারা গেছেন ১৩২ জন।

এছাড়া দেশটিতে শনিবার আরও ৬৩৩ জন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসের এই ধরনটি প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এই প্রথম একদিনে দেশটিতে এতো সংখ্যক ওমিক্রন রোগী শনাক্ত হলো।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শনিবার শনাক্ত হওয়া রোগীসহ এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৯৮ জনের শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে।

শেয়ার করলে অনুপ্রাণিত হবো...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *